জুলাই ২২, ২০২২
দারিদ্র্যের কাছে হার মানেনি ফুলঝুরি
সুপ্রভাত ডেস্ক: বিশ্ব ঐতিহ্যের অপরুপ শোভামন্ডিত ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। দক্ষিণ-পশ্চিম উপক‚লীয় অঞ্চলের সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার আইবুড়োনদীর কোলঘেঁষে অবস্থিত মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের মথুরাপুর গ্রাম। এই গ্রামের জেলেপল্লীতে বসবাস করে স্বপন সরদার ও ভারতী সরদার। ২০০৪ সালের ২০ নভেম্বর তাদের পরিবারে দি¦তীয় সন্তান হিসাবে জন্মগ্রহণ করে ফুলঝুরি সরদার। দুই ভাই ও বোনের মধ্যে সে ছোট। তার বাবা সুন্দরবনের নদীতে মাছ ধরে ও মা গৃহিণী। ২০১৮ সালে ৭ম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর আর পড়া লেখাপড়ার সৌভাগ্য তার হয়নি ফুলঝুরি সরদারের। বাবা-মায়ের অভাব অনটনের সংসারের মধ্যে পড়ালেখা করতে না পেরে বাবার কাকড়া ও মাছ ধরা পেশায় সহযোগিতা করতো ফুলঝুরি সরদার। দৈনিক ৫০-১০০ টাকা করে আয় করত সে। এক পর্যায়ে সে জানতে পারে উত্তরণ মথুরাপুর গ্রামে মাছ ও কাকড়া শিল্পের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সাথে জড়িত শিশুদেরকে নিয়ে একটি লার্নিং সেন্টার শুরু হতে যাচ্ছে। এ সময় ভুলে যাওয়া পড়ালেখাকে পুনরায় ধরে রাখতে আগ্রহী হয়ে ওঠে ফুলঝুরি। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী হিসাবে অর্ন্তভ‚ক্ত হয়ে সে নিয়মিত পড়ালেখা চলমান রাখে। লার্নিং সেন্টারে পড়ালেখার পাশাপাশি দর্জি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। ফুলঝুরি সরদারের বাবার মাত্র ৩ শতক খাস জমিতে মাটির বেড়া ও কাঁচা দেয়ালের ঘর। বাবার আর্থিক সহযোগিতা, নিজের পায়ে দাঁড়ানো এবং দর্জি পেশার কাজকে ধরে রাখার জন্য নব উদ্যমে কাজ শুরু করে সে। এতে দৈনিক ১০০ থেকে ১২০ টাকা আয় হয়। এক সময়ে পেটে ভাত কিংবা পরোনের ন্যূনতম চাহিদামতো কাপড় ঠিকমতো জুটত না, তবুও সে দমেনি। হার মানেনি দারিদ্র্যের কাছে। নির্মম বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে ভবিষ্যৎ গড়ার পথে হাঁটছে। যথাযথ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দারিদ্র্য দূর করে পরিবারের দুঃখী বাবা-মার মুখে হাসি ফোটানোই তার মূল লক্ষ্য। এজন্য লেখাপড়ার পাশাপাশি দর্জির কাজ করে সার্থক হয়েছে। স্বপ্নপূরণের দিকে এগিয়ে চলছে ফুলঝুরি। জীবনযুদ্ধে নেমে শত বাধা পেরিয়ে সে দেখিয়েছে বিশেষ কৃতিত্ব।
ফুলঝুরি সরদার জানায়, সে লেখাপড়ার পাশাপাশি টেইলার্সে কাজ করবে। ভালভাবে কাজ শিখে সে সফল নারী দর্জি হয়ে নিজেই টেইলার্সের মালিক হবে। বাবা-মায়ের সংসারের কষ্ট দূর করবে। যতদিন নিজে একটি দোকান করতে না পারবে ততদিন এভাবেই কাজ করে যাবে। নিজের পরিচয়ে পরিচিত হতে চায় সে।
মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অসীম কুমার মৃধা বলেন, উত্তরণের এডুকো প্রকল্পের এই কার্যক্রম উপকূলীয় এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। 8,592,071 total views, 8,757 views today |
|
|
|